ট্রানজিট পয়েন্ট বরিশাল ॥ পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা ট্রানজিট পয়েন্ট বরিশাল ॥ পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা - ajkerparibartan.com
ট্রানজিট পয়েন্ট বরিশাল ॥ পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা

7:02 pm , June 8, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মহানগরীর আশেপাশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত চিংড়ির রেনু পোনা পাচার হচ্ছে। প্রায়সই এধরনের কম বেশী রেনু পোনা আটক হলেও অপতৎপরতা থেমে নেই। অতি সম্প্রতিও নগরী থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্বে বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেহালগঞ্জ ফেরীঘাট দিয়ে ভোর রাতে ট্রলার থেকে ৩৫টি ড্রাম ভর্তি গলদা ও বাদগা চিংড়ির রেনুপোনা ট্রাকে তোলার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। চিংড়ির রেনুপোনা সহ ২০ অপরিচিত লোকজনকে ঘেরাও করে রেখে বিএমপি’র বন্দর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৪ পাচারকারীকে আটক এবং ট্রাকটি জব্দ করে।

পরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ওই ১৪ পাচারকারীর প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেয় সহ রেনুপোনাগুলো পার্শ্ববর্তি নদীতে অবমুক্ত করা হয়। তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ বন্দর থানা পুলিশ ৪ শীর্ষ পাচারকারীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। এর ঠিক কয়েকদিন আগেই পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা প্রশাসন বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালী ফেরীঘাট থেকে দুটি ট্রাক সহ ৫লাখ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনুপোনা আটক করে। পরে ট্রাক দুটির চালক এনামুল মলি¬ক ও মিরাজকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। আটক রেনুপোনা পায়রা নদীতে অবমুক্ত করা হয় ।

রেনুপোনা জব্দের এ দুটি ঘটনা থেকে সহজেই বরিশাল অঞ্চল থেকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা তাদের ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে নিয়মিত কোটি কোটি টাকার রেনুপোনা পাচারের ঘটনা স্পষ্ট হচ্ছে। ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী উপকূল থেকে অবৈধভাবে ধরা বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেনুপোনা পাচারের জন্য বরিশাল সদর উপজেলার নেহালগঞ্জ ও লাহারহাট ফেরীঘাট এবং নগরীর একতলা লঞ্চঘাট, তালতলী ও বেলতলা খেয়াঘাটকে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার করে আসছে একটি পাচারকারী সিন্ডিকেট। নেহালগঞ্জ ফেরীঘাট বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত। ওই ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় প্রতি রাতেই নেহালগঞ্জ অথবা পাশের কাটাদিয়া ঘাট থেকে রেনুপোনা পাচার করা হয়। নেহালগঞ্জ ঘাট এলাকায় পাচারকারী চক্র অস্থায়ী টংঘর বানিয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা অবস্থান করে। গভীর রাতে চিংড়ি পোনা নিয়ে ট্রলার এলেই শ্রমিকরা তা ট্রাকে তুলে দিচ্ছে।

সংশি¬ষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরের উপকূলীয় এলাকা এবং বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ধরা রেনুপোনা সড়ক পথে পাচার হচ্ছে। পাচারকারীরা এসব রেনুপোনা পৌঁছে দেয় বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও খুলনার চিংড়ি ঘের মালিক এবং সংশি¬ষ্ট এলাকার দালালদের কাছে। চিংড়ির রেনুপোনা পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা হারুন ওরফে পাতিল হারুন বুধবার ভোর রাতে নেহালগঞ্জ ফেরীঘাটে আটক হবার পর প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের বলেন, বন্দর থানা পুলিশকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়েই তারা দীর্ঘদিন ধরে রেনুপোনা পাচার করছেন। হারুন ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের জানান, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ির রেনুপোনা পাচারকারী চক্রের প্রধান হলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ টুলু।

সম্প্রতি রেনুপোনা পাচারকালে র‌্যাবের হাতে আটক হলে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পায় সে। এখন গা ঢাকা দিয়ে আছে। হারুন ওরফে পাতিল হারুন সাংবাদিকদের আরো বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা রেনুপোনা পাচারের ব্যবসা করছেন। বরিশাল অঞ্চল থেকে প্রতি রাতে কমপক্ষে ১৫টি ট্রাক ভর্তি করে চিংড়ির রেনুপোন যায় বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও খুলনায়। নেহালগঞ্জে অতি সম্প্রতি আটক হওয়া ট্রাকটির (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৩৯১৬) মালিক বাগেরহাটের ফকিরহাট ট্রান্সপোর্টের হুমায়ুন কবির। ওই রেনুপোনা নেয়া হচ্ছিল একই উপজেলার মোঃ মনিরুল ইসলামের আড়তে। মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি বরিশাল অঞ্চলের পাচারকারীদের কাছ থেকে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। মনিরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, সম্প্রতি বরিশাল ও পটুয়াখালী উপকূল থেকে রেনুপোনা সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। তবে বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে নিরাপদে সড়ক পথে রেনুপোনা পৌঁছে যাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। পাচারকারী পাতিল হারুনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএমপির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল সাংবাইদকদের জানান, নেহালগঞ্জ ঘাটে পুলিশ যাওয়ার কারণেই ওই রেনুপোনা ধরা পড়েছে। অন্যথায় স্থানীয় লোকদের ম্যানেজ করে পাচারকারীরা পোনা নিয়ে সটকে পড়তো। অবশ্য জরিমানা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর পাচারকারী পাতিল হারুনও এখন বলছেন, তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি।

এদিকে বরিশাল মেট্রেপলিটন পুলিশের মূখপত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ নাসির উদ্দিন মলি¬ক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নেহালগঞ্জ ফেরীঘাটে চিংড়ির রেনুপোনা আটকের ঘটনার পর ওই থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহফুজুর রহমান। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) খান মোঃ আবু নাছের। কোস্টগার্ড বরিশাল স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট বরিশালকে রেনুপোনা পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের সোর্স নিয়োজিত আছে। খবর পেলেই তারা অভিযানে যান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT