6:21 pm , June 6, 2018

মো. জসিম জনি, লালমোহন ॥ সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হলেও পূর্ণবাসন সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ভোলার লালমোহন পৌরসভা ও কালমা ইউনিয়নের ২১৬ জেলে। আর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চার মাসের সহায়তার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২ মাসের চাল। রহস্যজনক কারণে জেলে পূর্ণবাসনের চাল বিতরণ বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুবিধাভোগীরা। সরকারি আদেশ অনুযায়ী মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা দরিদ্র জেলেদের এসব সহায়তা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে শিগগিরই এসব চাল বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকতা রুহুল কুদ্দুছ জানায়, জাটকা ও মাছের রেণু পোনা সংরক্ষণের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর লালমোহন উপজেলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। এ জন্য মৎস্য অধিদপ্তর চার মাস (ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে) জেলে প্রতি ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক থেকে এই চাল তাদের দেওয়ার কথা। কিন্তু ইউনিয়নগুলোতে কখন চাল দেয় কখন দেয়না তার কিছুই জানানো হয় না মৎস্য অফিসকে।
লালমোহন উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্য জেলে সমিতির সভাপতি মোঃ ইউনুছ মিয়া বলেন, জেলেদের চাল নিয়ে নয়-ছয় করা ঠিক না। যেসব ইউনিয়নে চাল বিতরণ করা হয়েছে সেখানে দুর্ণীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। বার বার বলেও কোন কিছু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জেলেদের চাল দুই মাস দুই মাস করে বিতরণ করা হয়। দুই মাসে ৮০ কেজির জায়গায় ৫০/৬০ কেজির উপর চাল পায় না জেলেরা।
লালমোহন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোঃ নুরুল্লাহ বলেন, লালমোহন পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত ৪ মাসের ৮.৬৪ মেঃটন চাল এখন পর্যন্ত উত্তেলন করেননি। অপরদিকে কালমা ইউনিয়নে ২৫.৯২ মেঃটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত চাল উত্তোলন করেননি। পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের চাল উত্তোলন করা হয়েছে। ৩য় কিস্তির চাল এপ্রিল মাসের ২২ তারিখে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, ৪র্থ কিস্তির চাল মে মাসের ১৪ তারিখে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও চাল উত্তোলন করে পরিষদের গুমাদে রেখে দেওয়া হয়েছে।
লালমোহন পৌরসভার নিবন্ধনকৃত জেলে বীরেন চন্দ্র দাস, অজুর্ন দাস ও আব্দুর রববসহ আরো অনেকে বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হলেও পূর্ণবাসন সহায়তা চাল এখন পর্যন্ত পায়নি। আদৌ এ সুবিধা পাবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কালমা ইউনিয়নের নিবন্ধনকৃত জেলে আসাদুজ্জামন বলেন, মৎস্য বিভাগ থেকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে আমরা সম্মান জানিয়েছি। আমাদের নামে সরকার চাল বরাদ্ধ করলেও এখনো চাল পাইনি। এ অবস্থা হলে আগামী দিনে জেলেদের আটকে রাখা কষ্টকর হবে।
পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে পাঙ্গাসিয়া ঘাটের নিবন্ধনকৃত জেলে নুরুল ইসলাম, রুহুল আমিন বলেন, জেলেরা প্রতিবছর ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেন জাল নৌকা কেনার জন্য। কিন্তুু ইলিশ মৌসুমে এলেই মাছ ধরে তা নিয়ে আসতে হয় ব্যবসায়ীদের মাছ ঘাটে। চাল না পাওয়া কষ্টেতে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, জেলেদের চাহিদার তুলনায় চাল অনেক কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় জেলেদের চাল বিরতণ করতে পারেননি। দুই চার দিনের মধ্যেই ওই চাল উত্তোলন করে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, বিভিন্ন কারণে এসব এলাকায় জেলেদের চাল বিতরণ বিলম্ব হয়েছে। এখন অতিদ্রুত ওই চাল বিতরণ করা হবে।