6:06 pm , June 4, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া রোষ্টার বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। নুতন ও পুরাতন কর্মচারীদের বকশিস বানিজ্য’র ওয়ার্ড কিংবা বিভাগে দায়িত্ব দেয়ার নাম করে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। দীর্ঘ দিন ধরেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তার রোষ্টার বানিজ্য বেপরোয়া হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু রোষ্টার বানিজ্যই নয়, অপমৃত্যুর লাশ নিয়েও বানিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিরব।
হাসপাতালের কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দিন ধরেই হাসপাতালের কর্মচারীদের ডিউটি বন্টনের রোষ্টার এর দায়িত্ব পালন করছেন ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ। যেসব স্থানে বাড়তি আয় বেশি সেই স্থানে কর্মচারীদের ডিউটি দিয়ে প্রতি রোষ্টার তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন সর্বনি¤œ ৫শ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, প্রসুতী ওয়ার্ড, মহিলা সার্জারী, মেডিসিন, অর্থপেডিক্স ওয়ার্ড, প্যাথালজী, রেডিওলজী, জরুরী বিভাগ ও রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগে বছরের পর বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা কর্মচারীদের কাছ থেকে সর্বনি¤œ এক হাজার থেকে বিভিন্ন হারে উৎকোচ আদায় করে নিচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। সে অনুযায়ী বেতন ভাতা বাদেই প্রতি মাসে আবুল কালাম আজাদ এর অবৈধ পথে বাড়তি আয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
হাসপাতালের কর্মচারীরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার করে রোস্টার হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ নিজ ক্ষমতায় যখন খুশি তখন রোষ্টার পরিবর্তন করেন। যে টাকা না দেয় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় হাসপাতালের সামনে রিক্সা ধাওয়ানো, ড্রেন পরিস্কার করা সহ যেসব বিভাগে বাড়তি আয় নেই সেইসব স্থানে।
হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান পরিচালক নুতন কর্মচারীদের কাজের সুযোগ করে দিতে কন্ট্রাক্ট সার্ভিস বাতিলের পাশাপাশি বহিরাগত অতিরিক্ত কর্মচারীদের বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু তার নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখনো হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বহিরাগত আয়াদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। যারা না দেয় তাদের হাসপাতালের দুয়ারেও ভিরতে দিচ্ছেন না তিনি।
তবে হাসপাতালের পুরানো কর্মচারীদের যেসব সন্তান কিংবা আত্মিয়দের চাকুরী হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঘটছে ব্যতিক্রমটি। নিজের ছেলে সহ প্রভাবশালী ওইসব কর্মচারীদের বিনা টাকায় ডিউটি দিচ্ছেন স্ব স্ব স্থানে। যে কারনে নুতন ওইসব কর্মচারীরা নিয়মিত কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছে না। বরং ঘুরে ফিরে সময় পার করছে তারা। বেশিরভাগ সময় ওইসব কর্মচারীদের আড্ডায় মিলতে দেখা যায় সরদারদের জন্য নির্ধারিত কক্ষ সহ হাসপাতালের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে। তাছাড়া যাদের বহিঃর্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বারে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে বহিরাগত ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা বাইরে পছন্দের চিকিৎসকের কাছে। এজন্য সেখান থেকে পার্সেন্টেজ বাবদ পাচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আবার যারা উৎকোচ দিয়ে ভালো যায়গায় ডিউটি নেন তারা তাদের ক্ষতিপুরন কাটিয়ে উঠতে রোগীদের জিম্মি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে অপমৃত্যু হওয়া সকল রোগীর ফাইলের জিম্মাদার ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ। অপমৃত্যুর লাশ ছাড়িয়ে নিতে স্মরণাপন্ন হতে হয় আবুল কালাম আজাদের কাছে। ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ ছাড়িয়ে নেয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে ফিস বাবদ তাকে বকশিস দিতে হচ্ছে। তাছাড়া অপমৃত্যুর রোগীর মৃত দেহ ছাড়িয়ে নিতে এনডিসি বরাবর যে আবেদনটি লেখা হয়ে থাকে তাও লিখে দেন আবুল কালাম আজাদ। প্রতিটি আবেদনপত্র লেখার ফি হিসেবে স্বজনদের কাছ থেকে রাখছেন সর্বনি¤œ ৫শত টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ রোষ্টার ও লাশ বানিজ্য করে অবৈধ অর্থে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গছে। নগরীর ধানগবেষনা এবং সোনারগাও টেক্সটাইল মিল সহ বিভিন্ন স্থানে জমি এবং বাড়ি নির্মান করেছেন তিনি। হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। দীর্ঘ বছর ধরেই তার এমন অনৈতিক কর্মকান্ড চলে আসলেও বিষয়টি নজরে আসছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সেই সুযোগে অপমৃত্যুর লাশের স্বজন ও কর্মচারীদের চুষে খাচ্ছেন বলে কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে বরাবর আবুল কালাম আজাদ তার বিরুদ্ধে ওঠা রোষ্টার এবং লাশ বানিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রোস্টার বানিজ্য করে যা আসছে তা শুধুমাত্র আবুল কালাম আজাদ একাই নেন না। এর ভাগ পেয়ে থাকেন চতুর্থ শ্রেনি কর্মচারী কল্যান সমিতির কতিপয় কথিত নেতারা। যে কারনে কালামের অনৈতিক কর্মকান্ডের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে অসহায় কর্মচারীরা বলছেন, সদ্য যোগদানকারী পরিচালক ডা. আব্দুল বাকির যোগদানের পর পরই হাসপাতালের চিত্র অনেকটাই পাল্টে দিয়েছেন। তিনিই পারেন রোস্টার এবং লাশ নিয়ে বানিজ্য বন্ধ করতে। প্রয়োজনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ খতিয়ে দেখে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মচারীরা।