6:49 pm , June 3, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম’এর এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করতে আগামিকাল বরিশাল আসছেন। বরিশাল সার্কিট হাউজে মঙ্গলবার এ প্রশিক্ষন কর্মশালায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ছাড়াও ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাগন অংশ নেবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার পৈত্রিক নিবাস পটুয়াখালীর বাউফলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কর্মসূচীতে অংশ নেবেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে বরিশাল সহ দেশের ৩টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা হলেও এখনো রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২০১৩-এর নির্বাচনে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানকে বরিশালে রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। গত জুলাই থেকে তিনি বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। অপরদিকে বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার পদটিও শূণ্য গত এপ্রিলের শেষভাগ থেকে। গত বছরের শেষভাগে বিএমপি’র কমিশনার এসএম রুহুল আমীনকে একবার বদলী করা হলেও মাসখানেক পরে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু সিটি নির্বাচনের আগে নতুন কাউকে নিয়োগ না দিয়ে অনেকটা আকষ্মিকভাবেই বিএমপি’র সেই কমিশনারকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলী করা হলে গত ২৭ এপ্রিল তিনি বরিশাল ত্যাগ করেন। অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান বর্তমানে বিএমপি’র কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনের আগে সরকার বিএমপি’তে কোন নতুন কোন কমিশনার নিয়োগ দেবে কিনা তা এখনো পরিস্কার নয়। এধরনের কোন পরিকল্পনা থাকলে আগামী ১৩ জুন তফসিল ঘোষণার আগেই তা সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী। অথবা তফসিল ঘোষণার পরে নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছেনুযায়ী নতুন পুলিশ কমিশনার নিয়োগের প্রশ্ন উঠতে পারে। অপরদিকে মহানগরীর যে কোতয়ালী, কাউনিয়া ও বিমান বন্দর থানা এলাকায় সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে, সেসব থানার সহকারী কমিশনার এবং ওসি পদেও কোন রদবদল হবে কিনা তা এখনো পরিস্কার নয়। তফসিল ঘোষনার পরে নির্বাচন কমিশন চাইলে তা করতে হবে পুলিশ বিভাগকে।
তবে দীর্ঘদিন এ দুটি থানার এসি ও ওসি পদে যেসব কর্মকর্তাগন রয়েছেন তাদের পরিবর্তনের দাবী উঠতে পারে বিরোধী দল থেকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আরো কতিপয় কর্মকর্তাকে বদলীর বিষয়ে বিরোধী দল দাবী তুলতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। তবে বিরোধী শিবির এখনো রিটার্নিং অফিসার পদে কাকে নিয়োগ দেয়া হয় সে বিষয়টিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষনে রেখেছে বলে জানা গেছে।
২০১৩-এর ১৫ মে বরিশাল সিটি নির্বাচনে ২ লাখ ১০ হাজার ৩৪১ ভোটারের ৭৩.৫৮ ভাগ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আসন্ন নির্বাচনে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৩২ হাজার নতুন ভোটার তালিকাভূক্ত হয়েছেন। যাদের প্রায় সবাই তরুন।
২০১৩-এর সিটি নির্বাচনে বরিশাল মহানগরীরর যে ১শ’ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হয়। যার ৮০ ভাগেরও বেশী ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা অন্তত ২৫টি বাড়তে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যাও নিঃসন্দেহে বাড়বে বলে মনে করছেন একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
এদিকে আগামী ১৩ জুন বরিশাল সহ দেশের ৩টি সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপরেই এ ৩টি মহানগরীতে পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক কিছু নির্বাচন কমিশনের হাতে যাবার কথা। বরিশাল সিটি নির্বাচনে জামায়াত ইসলাম আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছে। দলটির মহানগর আমীর এ্যাডভাকেট মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলালকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করা হয়েছে বলে জানান হয়েছে। তবে এটা এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে জোটবদ্ধভাবে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান হয়েছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে হেলাল জামায়াত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দু বারই জামানত হারান। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজারের মধ্যে। এবার দলীয়ভাবে না হলেও জামায়াত প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে দলের স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বরিশাল সহ ৩টি সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে ঘোষনা করেছে। ২০০৮-এর পূর্ববর্তী সবগুলো নির্বাচনেই বরিশাল সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী জামানত হারান।
জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভিন্নভাবে অংশ নিক, এ কৌশল অনেকদিন ধরেই ছিল মহাজোটের স্থানীয় পর্যায় থেকে। জামায়াত প্রার্থী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পরে সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় স্থানীয় আদালত থেকে জামিন লাভ করে ক্রমে ভোটের রাজনীতিতে কিছুটা সক্রিয় হচ্ছেন।