6:48 pm , June 3, 2018

রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডে গতবারের থেকে আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিন প্রার্থীর সাথে নতুন মুখ হিসেবে যুক্ত হয়েছে আরো তিনজন। যার মধ্যে একজন স্বতন্ত্র হলেও বাকি দু’জন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও কমিউনিস্ট পার্টি’র মনোনিত প্রার্থী। এদের মধ্যে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপুকেই দেখছেন ওয়ার্ডবাসী। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে নতুন-পুরাতন তিন প্রার্থী’র মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদের মধ্যে থেকেই যে কোন একজন আগামী ৩০ জুলাই’র ভোটে বিজয়ের হাসি হাসবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে পরিবর্তনের ধারাবাহিক ওয়ার্ড পরিক্রমায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ৬নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। যার মধ্যে সাত হাজারের বেশি ভোট রয়েছে বাজার রোড, হাটখোলা, কসাইখান এলাকা জুড়ে। তাই ভোটের প্রস্তুতি ও প্রচার প্রচারনা এই এলাকা ঘিরেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিসি’র ৩য় পরিষদের নির্বাচনে ৬ নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৬ জন প্রার্থী। পাঁচ প্রার্থীকে পরাজিত করে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ ভোট পেয়ে প্রথম হন বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু। তিনি ১১৯ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তখন ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো প্রায় ৮ হাজার।
এর পূর্বে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর ২০০৩ সালের প্রথম নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান টিপু। শুধু বিজয়ীই নয়, তৎকালিন ওই নির্বাচনে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৫ প্রার্থীই জামানত হারান। মাঝখানে ২০০৮ সালে সাবেক কাউন্সিলর প্রয়াত শেখ সোহবাহানকে দেয়া ওয়াদা রক্ষায় নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান হাবিবুর রহমান টিপু।
এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু’র দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তাকে নিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগের অন্ত নেই। তিনি ভোটারবান্ধব ও উন্নয়নের চিন্তা ধারার নন এমনকি তাকে একজন পেশাদার ঠিকাদার বলেও অবহিত করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিসিসি’র এক পরিসংখ্যা দেখেগেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০টি ওয়ার্ডে যে উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে সব থেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বানিজ্যিক এলাকাভিত্তিক ৬ নং ওয়ার্ডে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, গত প্রায় পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য কোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর করে দেখাতে পারেনি। যে উন্নয়ন করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হলো- ওয়ার্ডের অধীন প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কসাইখানা মার্কেট এবং প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে হাটখোলায় আরো একটি মার্কেট। এর বাইরে ৬নং ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় অনেক ভালো। হাটখোলা প্রধান সড়ক, স্বরুপআলী সড়ক, হাটখোলা মসজিদ সড়ক, এনায়েতউল্লাহ সড়ক এবং ওয়াদুদিয়া মসজিদের সামনের রাস্তা নির্মান করে দিয়েছে। যা পুরোটাই আরসিসি রাস্তা। এর মধ্যে ওয়াদুদিয়া মসজিদ সংলগ্ন রাস্তাটির গত ৪০ বছরেও কোন উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু আমি করেছি। হাটখোলা মন্দির রোডের কাজ চলমান। গগণগলি সড়কের ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। পীর সাহেব সড়ক, শুক্কুর গফুর পার্ক বর্ধিত করন, চার কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ার্ডবাসীর জন্য নির্মান করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। যা এই ওয়ার্ডে প্রথম। এর বাইরেও আরো বহু প্রকল্প রয়েছে যার টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন কাজ শুরুর অপেক্ষা মাত্র। চকেরপুল থেকে মহাবাজ পর্যন্ত সীমানার এই ওয়ার্ডটি পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের রোল মডেল হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন হাবিবুর রহমান টিপু।
তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মরহুম আব্দুস সোবাহান একজন ভালো লোক ছিলেন। তার সাথে আমার ভালো হৃদ্যতা ছিলো। তাকে সাথে নিয়েই বিগত দিনে উন্নয়ন করেছি। তিনি থাকলে ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে আরো ভাবে কাজ করা যেতো। তার দোয়া এবং ভালোবাসা নিয়েই এবারের নির্বাচনের জন্য আমি পুনরায় প্রস্তুতি নিয়েছি। বিগত নির্বাচনে আমি অল্প কিছু ভোটে বিজয়ী হয়েছি। জনগন যদি মনে করেন আমি তাদের উন্নয়নে কাজ করেছি তবে তারা আমাকে এবারেও বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
এদিকে ৬নং ওয়ার্ডে শেখ সোবাহান এর অবর্তমানে তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত উন্নয়ন সম্পন্নের লক্ষ্য নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শেখ মো. আতাউল গনি। যিনি মরহুম শেখ সোবাহান এর ফুফাত ভাই এবং হাটখোলার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি। এক সাক্ষাতকারে নগরীর সোনালী আইসক্রিমের মোড় এলাকার বাসিন্দা ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শেখ মো. আতাউল গনি বলেন, বর্তমান কাউন্সিলরকে নিয়ে এলাকার জনগন অতিষ্ঠ। ভোটাররা তাকে কাছে পায় না। সে সবসময় বিসিসি এবং ঠিকাদারী কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আর তাই ওয়ার্ডবাসী কাউন্সিলর হিসেবে নুতন মুখ দেখতে চায়। জনগনের সেই চাওয়া থেকেই আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছি। আশাকরি জনগন তাদের মূল্যবান রায় আমাকেই দিবে।
তিনি বলেন, শেখ সোবাহান’র জীবদ্দশায় আমি তার নির্বাচন করেছি। তার অনেক পরিকল্পনা ছিলো ওয়ার্ডটিকে ঘিরে। যে কারনে তার মৃত্যুর পরে আমি সেই স্বপ্ন পুরনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছি। শেখ সোবাহান এর নামে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা এবং লেন্স স্থাপন করে দিয়েছি অনেক মানুষের। মাদক বিরোধী সহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছি। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার মাদক মুক্ত ও উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন প্রথম বারের মত স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চলা শেখ মো. আতাউল গনি।
ওদিকে চতুর্থ বারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ী খান মো. জামাল হোসাইন। যিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার পর থেকে অর্থাৎ ২০০৩ সাল থেকেই ৬নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। প্রথম বার নির্বাচনে অংশগ্রহন করে জামানত হারান তিনি। পর্যায়ক্রমে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় হন খান জামাল। অবশ্য ওই নির্বাচনে ভোট গননা শেষ হওয়ার আগেই বিজয় মিছিল করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখতে পান ১১৯ ভোটে পরাজিত হয়েছেন খান জামাল। এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আদালতে মামলাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে মামলা তুলে দেন জামাল। অবশ্য তার দাবী বর্তমান কাউন্সিলরের পারিবারিক প্রস্তাবের কারনেই তিনি মামলা তুলে নেন। কিন্তু তার এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছেন কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ দাবীদার মৎস্য ব্যবসায়ী খান জামাল হোসাইন বলেন, এবারের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হব, এটা আমার বিশ্বাস। তাই চতুর্থবারের মত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রচার প্রচারনায় চলছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন গতবারের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী নারায়ন চন্দ্র দে নারু। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর মধ্যে এক হাজার ১২৫ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন তিনি। তবু দ্বিতীয় বারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুঁজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি ও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র দে নারু। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তিনি জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নয়, বরং আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেলেই তিনি নির্বাচন করবেন। অন্যথায় নির্বাচন করবে না। খোঁজ খবর নিয়ে যতটুকু জানাগেছে, তাতে ৬নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দেলোয়ার ভূইয়ার নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবী করছেন এলাকার ভোটাররা। ইতিপূর্বে তিনি এলাকায় পোষ্টার টানিয়ে মানুষকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তবে দেলোয়ার ভূইয়া জানিয়েছেন, নির্বাচন করার কোন ইচ্ছা ও প্রস্তুতি তার নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নারায়ন চন্দ্র দে নারুকেই আমরা সমর্থন জানাচ্ছি।
এদিকে উল্লেখিত প্রার্থীদের বাইরেও ৬নং ওয়ার্ডে আরো দু’জনকে দলীয় ভাবে প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে দুটি দল থেকে। যে দু’জনকে প্রার্থী করা হয়েছে তারা দু’জন ভোটের রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। এরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৬নং ওয়ার্ড শাখার সেক্রেটারী মো. বাদল সিকদার এবং অপরজন বামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন কমিউনিস্ট পার্টি মহানগর কমিটির সভাপতি এএসএম মানিক। স্ব স্ব দল থেকে ওই ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য তাদের নির্ধারন করা হলেও তাদের তোড়-জোড় দেখা যাচ্ছে না। নেই ব্যানার, পোষ্টার বা প্রচার-প্রচারনায় দেখা যাচ্ছে না। ওয়ার্ডের বেশিরভাগ লোকই তাদের চেনেন না বলে জানিয়েছেন।