উন্নয়নের স্বার্থে নতুন মুখের খোঁজে ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে নতুন মুখের খোঁজে ভোটাররা - ajkerparibartan.com
উন্নয়নের স্বার্থে নতুন মুখের খোঁজে ভোটাররা

6:42 pm , June 2, 2018

রুবেল খান ॥ বিসিসি’র অবহেলিত আরো একটি ওয়ার্ডের নাম ৫নং ওয়ার্ড। যে ওয়ার্ডটির দুর্ভোগের চিত্র প্রায়শই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন খবরের কাগজে। জনপ্রতিনিধিরা আসে-যায়। তবু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে না ওয়ার্ডবাসীর। তাই এবারের আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণের কথা ভাবছেন। ভূমিদস্যু, দখলবাজ, কম শিক্ষিত প্রার্থীদের বর্জন করে প্রকৃত জনদরদী খোঁজ করছেন তারা। এমনসব তথ্যই মিলেছে বিসিসি’র পাঁচ নং ওয়ার্ডের ভোটের হালচিত্র সন্ধানে গিয়ে। তবে ভোটাররা যাই চায়, তবুও থেমে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারনা। ৫ নং ওয়ার্ডে এরই মধ্যে প্রায় ডজন খানেক সম্ভাব্য প্রার্থী যে যার অবস্থান থেকে নিজেদের প্রতিদ্বন্ধিতার কথা জানান দিচ্ছেন। অলি-গলি, স্কুল’র সামনে এবং চায়ের দোকানের আড্ডাস্থলে নিজেদের ছবি সম্বলিত পোষ্টার এবং ব্যানার টানিয়েছে। সময় কাটাচ্ছেন প্রচার-প্রচারনায়। যার মধ্যে রয়েছেন ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. মাঈনুল হক। তিনি ছাড়াও এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আনোয়ার হোসেন সালেক, তরুন সমাজ সেবক কেফায়েত হোসেন রনি, ব্যবসায়ী মো. মন্টু মিয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাউনিয়া থানা কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও ৫নং ওয়ার্ডের জিম্মাদার জাহিদুল ইসলাম সবুজ এবং অটোরিক্সা চালক আলম বিশ্বাস। তবে এদের মধ্যে থেকে মাঈনুল হক, শেখ মো. আনোয়ার হোসেন সালেক ও কেফায়েত হোসেন রনি’র অবস্থান অনেকটা ভালো। প্রার্থী যাই থাকুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এদের মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তবে যারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছে তাদের মধ্যে একজন মাত্র রয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত। বাকিদের অনেকেই ৮ম শ্রেণির গন্ডিও পেরুতে পারেননি। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ৫নং ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট সীমানা, সড়ক এবং ড্রেনের সংখ্যা এমনকি ভোটার সংখ্যাও জানেন না।

জানাগেছে, বিসিসি’র ৫নং ওয়ার্ডটিতে ঘনবসতি বেশি। বিশেষ করে পলাশপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকা ঘিরেই ভোটার সংখ্যা বেশি। ঘনবসতির এই ওয়ার্ডটিতে টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন কাউন্সিলর মো. মাঈনুল হক। তার পূর্ব পুরুষেরাও এই ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন মাঈনুল হক। ওইসময় তিনি ৩ হাজার ১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ মো. আনোয়ার হোসেন সালেক ২ হাজার ৩০৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। ওইসব প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলরের চাচাও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে ছিলেন। অবশ্য নির্বাচনে তার ভোটের ফলাফল নিয়ে কারচুরি অভিযোগও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের।

ঘনবসতির এই ওয়ার্ডটি পরিদর্শনকালে বসবাসকারীদের থেকে পাওয়া গেছে নানান অবহেলার, অনাচারের অভিযোগ। পলাশপুরের বাসিন্দারা বলেন, ওয়ার্ডটিতে যে সংখ্যক ভোট তার দুই তৃতীয়াংশ ভোট পলাশপুরে। তাই নির্বাচন এলে প্রার্থীরা বিভিন্ন আশ্বাসের বানী নিয়ে ছুটে আসছে এখানে। কিন্তু ভোট ফুরিয়ে গেলে কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। তারা যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন।

ভোটারা বলেন, এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর টানা ১৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। সে অনুযায়ী এই ওয়ার্ডটি উন্নয়নের রোল মডেল হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো টা। যেই দুর্ভোগ সেই দুর্ভোগই রয়ে গেলো। রাস্তা নেই, নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বৃষ্টি হলে পলাশপুরের প্রায় প্রতিটি রাস্তাই হাটু সমান পানির নিচে ডুবে থাকে। সৃষ্টি হয় মশা-মাছির উপদ্রপ। সে দিকে দৃষ্টি যাচ্ছে না ওয়ার্ড কাউন্সিলরের। এসব কিছু না করলেও আটা-ময়দার ব্যবসা আর দখলবাজী নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন বলে অভিযোগ ভোটারদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিলর মাঈনুল তার নিজ এলাকা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। খোঁজ রাখেন না আশপাশের এলাকায়। তবে তিনি দখল ভালো বোঝেন। পলাশপুর সাত নাম্বার সংলগ্ন চান মিয়ার ঘেরের পাশে প্রায় ১৭ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে মাঈনুল হক এর বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ইতিপূর্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন মাঈনুল হক। তখনকার সময় বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

তাছাড়া ভোটারদের দাবী, কাউন্সিলর মাঈনুল হক’র বড় সমস্যা তাকে পাওয়া যায় না। তিনি তার নিজস্ব লোকজন ছাড়া কারোর ফোনও রিসিভি করেন না। যে কারনে কারোর জন্মমৃত্যুর সংবাদও তাকে সরাসরি দেয়া সম্ভব হয় না। অন্যের মাধ্যমে সংবাদ পৌছতে হয় তার কাছে। যে কারনে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন মাঈনুল। এসব বিষয় এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে কাউন্সিলর মাঈনুল এর সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক বার ফোন দেয়ার পরে একবার কল রিসিভ করলেও মামার মৃত্যুতে ব্যস্ততা দেখিয়ে পড়ে ফোন করবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যোগাযোগ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ওয়ার্ড পরিক্রমায় দেখা যায় গত নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আনোয়ার হোসেন সালেকও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবারে তার বিষয় নিশ্চিত বলে আশাবাদী ভাঙ্গারীপট্টি এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী সালেক। আলাপকালে শেখ মো. আনোয়ার হোসেন মালেক বলেন, ইতিপূর্বে আরো দু’বার নির্বাচন করেছেন তিনি। প্রথম বার অর্থাৎ ২০০৮ সালে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৫৬৫ ভোট। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৩ প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দাড়ায় ২ হাজার ৩০৫ এ।

তিনি বলেন, গতবার সব কেন্দ্র থেকেই আমি এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু দুটি কেন্দ্রে ভোট কম পেয়েছি বলে আমি পরাজিত হই। তবে ওই দুটি কেন্দ্রে ভোট গণনা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা ভোট গণনার শেষ মুহুর্তে ওই কেন্দ্র দুটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এর পর পরই ঘোষনা হয় মাঈনুল হক কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে ভোটের কারচুপি হতে পারে বলেও সন্দেহ তার।

এদিকে ৫নং ওয়ার্ডের চমক হতে পারেন তরুন সমাজ সেবক ও একজন দক্ষ ক্রিকেটার কেফায়েত হোসেন রনি। যিনি এলাকাবাসির সহায়তা নিয়ে এই প্রথমবারের মত নির্বাচন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। শুধু একজন ভালো খেলোয়াড়ই নয়, ওয়ার্ডের একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীও তিনি। বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে একাউন্টিং এ প্রথম শ্রেনীতে মাস্টার্স সম্পন্ন করা রনি অন্য পেশায় নিজের কেরিয়ার না গড়ে জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এলাকার চলমান সমস্যা নিরসনে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনার প্রতিফলন ঘটাতে চান তিনি। অবশ্য পূর্বে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রনি। যে কারনে ওয়ার্ডের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে ভোটের ফলাফলে তিনি চমক সৃষ্টি করতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

তাছাড়া প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মনোনিত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম সবুজ। যার পেশা ওষুধ ব্যবসা। তিনি একজন পল্লি চিকিৎসকও বটে। নিজের ইচ্ছা না থাকলেও দলের ইচ্ছা আর ইসলাম এবং আল্লাহ’র হুকুমত কায়েম করতেই তিনি কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন পরিবর্তনকে।

অপর প্রার্থী আলম বিশ্বাস। যিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি। শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেনি পাশ বলে দাবী তার। পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক তিনি। নির্বাচনে প্রার্থী এবং কর্মী তিনি একাই। রাতে অটোচালিয়ে দিনভর প্রচারনার পেছনে সময় দিচ্ছেন। মাইকিং করে নিজের প্রচারনা নিজেই করে থাকেন। এমনি করেই ২০১৩ সালে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আলম বিশ্বাস। ওই নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৯৪টি। তবে এবারের নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আলম বিশ্বাস।

এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, একতলা লঞ্চ ব্যবসায়ী মো. মন্টু। অর্থনৈতিক ভাবে অনেকা স্বাবলম্বি হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা এবং উন্নয়নের চিন্তা ধারা থেকেই কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের অনুসারী মন্টু মিয়া বলেন, আমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের সমর্থন আসা করছি। তবে সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। আমার বিশ্বাস জনগন আমাকে গ্রহন করবে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এসব প্রার্থীদের বাইরেও আরো বেশ কয়েকজনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসছে ভোটারদের মুখে। কিন্তু তারা তেমন আলোচনায় নেই। ভোটের সময় নিজেদের আখের গোছাইতে প্রার্থী হিসেবে তারা নিজেদের নাম প্রচার করছে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। তাই ৫নং ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT