নগরীর বঞ্চিত ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সক্রিয় রয়েছে ৯ প্রার্থী নগরীর বঞ্চিত ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সক্রিয় রয়েছে ৯ প্রার্থী - ajkerparibartan.com
নগরীর বঞ্চিত ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সক্রিয় রয়েছে ৯ প্রার্থী

6:13 pm , May 31, 2018

রুবেল খান ॥ নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন বঞ্চিত ৩ নং ওয়ার্ড এলাকা। প্রায় ২০ বর্গমাইলের এই ওয়ার্ডটি বর্ধিত এলাকা হিসেবে সু-পরিচিত। নির্বাচনকালীন বর্ধিত এই এলাকাটিকে ঢেলে সাজানোর আশা দিয়েছিলেন বর্তমান কাউন্সিলর। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ বছরেও সেই আশ্বাসের নজির খুঁজে পায়নি ভোটাররা। যে কারনে ৩নং ওয়ার্ডে নতুন জনপ্রতিনিধিত্বের সন্ধানে নেমেছেন তারা। ওয়ার্ডবাসীর সেই চাহিদা পুরনের আশ্বাস নিয়ে ফের নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হয়েছেন অর্ধডজনের বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী। যার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী। যারা এরই মধ্যে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এসব প্রার্থীদের ভীড়েও পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ফারুক। তার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্নের জন্যই দ্বিতীয়বার নির্বাচন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সরেজমিনে বিসিসি’র ৩নং ওয়ার্ড পরিদর্শন করে জানাগেছে, সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে ৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থী ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী এবং বিএনপি নেতা-কর্মী। এর মধ্যে আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সহ ৪/৫ জন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরা কেউ দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা নয়, বরং সরাসরি ভোটের লড়াইতে সামিল হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র প্রার্থীরাও।

৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ফারুক বলেন, আমি রাজনৈতিক দলের নেতা হলেও নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এবারেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবো। এক্ষেত্রে দলীয় কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে না। বিএনপি থেকে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও আমি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় বারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। আশা করছি এবারেও জনগন আমাকেই ভোট দিবে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম নির্বাচন করেছি। তখন ওয়ার্ডে আমি ছাড়াও আরো তিনজন প্রার্থী ছিলো। যারা প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা সাতশ ছাড়াতে পারেনি। কিন্তু একমাত্র আমি একাই প্রায় ৩ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। তখন মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো প্রায় ৭ হাজার। এবার ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ালেও ভোটের হিসেবে আমি এখনো এগিয়ে আছি।

এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বিশাল আয়তনের এই ওয়ার্ডটিতে ১০৮টি রাস্তা রয়েছে। যার মধ্যে গত পাঁচ বছরে ১৪টি রাস্তা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ফারুক। বাকি ৯৪টি রাস্তার হয়নি কোন উন্নয়ন বা সংস্কার। এছাড়া ১০টি রাস্তা রয়েছে মাটির। চলতি বর্ষা মৌসমে যে রাস্তাগুলো মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে কর্দমাক্ত ওই রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করতে হচ্ছে ভোটারদের। তাছাড়া বিশাল আয়তনের এই ওয়ার্ডেটিতে নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তাই বর্ষা মৌসুমে হাটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় ৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়। এতো সব দুর্ভোগ দৃশ্যমান থাকা সত্যেও গত পাঁচ বছরে ৪৬ থেকে ৪৭ কোটি টাকার উন্নয়ন এই ওয়ার্ডে হয়েছে বলে দাবী করেছেন বর্তমান কাউন্সিলর।

এদিকে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যদিও এখন পর্যন্ত যারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ দলীয় সিন্ধান্তের অপেক্ষা করছেন না। যার মধ্যে রয়েছেন ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মৃধা। যিনি দলের সিদ্ধান্ত যাই হোক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংবিধানে এমন কোন নিয়ম নেই যে কোন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করতে পারবে না। তাই আমার ক্ষেত্রেও নির্বাচনের কোন বাঁধা আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাছাড়া আমি কাউন্সিলর না হলেও এলাকার সালিশ-মিমাংসা আমাকেই করতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের যে কাউন্সিলর রয়েছে ওয়ার্ডবাসী তাকে মানে না। কাউন্সিলর কোন সিদ্ধান্ত দিলে তা ভোটারদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় না। আর এ কারনেই কাউন্সিলর কোন সালিশ-বৈঠকেও যান না। তাই যেহেতু আমাকেই সব করতে হচ্ছে সে জন্যই আমি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ৩নং ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারেক আজিজ সজিব। যার বাবা মৃত জাহাঙ্গীর মৃধা ছিলেন ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার। তাছাড়া ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সজিব। কিন্তু প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা সাতশ’র উপরে যায়নি। এবারে দ্বিতীয়বার পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তারেক আজিজ সজিব প্রার্থী হলে মজিবর মৃধার জয়ের লক্ষ্যে পৌছতে বেগ পেতে হবে। কেননা সজিব মজিবর মৃধার একই বংশের দুসম্পর্কের আত্মীয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক ভোটের রাজনীতিতে ব্যাঘাত ঘাটতে পারে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। অবশ্য মজিবর মৃধা জানিয়েছেন তিনি নির্বাচনে এলে তারেক আজিজ সজিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না বলে তাকে জানিয়েছে।

এদিকে তারেক আজিজ সজিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন আরো দু’জন। এর মধ্যে একজন হলেন আঞ্চলিক পত্রিকার ফটোগ্রাফার জুয়েল রানা ও অপরজন বরিশাল ল’ কলেজের বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ নেতা সুজন খান। এদের মধ্যে জুয়েল রানাকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দেখছেন এলাকার ভোটাররা। তাছাড়া ৩নং ওয়ার্ডে সব থেকে ভোটার সংখ্যা বেশি পুরানপাড়া এলাকায়। ওই এলাকা থেকে একমাত্র প্রার্থী জুয়েল রানা। যে কারনে ভোটের হিসাব নিকাশের বাইরে নন তিনিও। অবশ্য সূত্র বলছে, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পদ পেলে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীতা করবে না জুয়েল রানা। আর না পেলে প্রার্থী হিসেবে বহাল থাকবেন।

অপরদিকে ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন আরো কয়েকজন। এর মধ্যে একজন ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদলের সহ-সভাপতি শামীম খান। যিনি গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাও সাতশ’র উপরে ওঠেনি। অপরজন ওয়ার্ড শ্রমিক দল নেতা শহিদুল হাওলাদার ও শাহজাহান নামে আরো একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বির জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর কমিটি। এই ওই দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইসলামী যুব আন্দোলন কাউনিয়া থানা শাখার সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম খান। বামপন্থি সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি। তবে প্রার্থী দেয়ার হলে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT